আবুল হোসেন

আবুল হোসেন: একাধিক ব্যক্তির নাম, একাধিক অবদান

"আবুল হোসেন" নামটি দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। তাঁদের জীবন, কর্ম ও অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হল:

  • *১. সৈয়দ আবুল হোসেন (১৮৬৪-১৯৩০):** হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও সাহিত্যিক সৈয়দ আবুল হোসেন ১৮৬৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বাবনাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামীণ পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর কলকাতা মাদ্রাসায় দু বছর অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করেন। ডেনভার মেডিক্যাল কলেজ থেকে হোমিওপ্যাথিতে এমডি এবং নিউ জার্সি থেকে সিএলএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৯৬ সালে জাপান ও চীন ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে কলকাতায় চিকিৎসা পেশা শুরু করেন।

চিকিৎসার পাশাপাশি সাহিত্যেও অবদান রাখেন। কাব্য, উপন্যাস, সমালোচনা, ইতিহাস, ধর্ম ও জীবনী বিষয়ক বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে: যমজভগিনী বা সিরাজুদ্দৌলা (১৯০৫), স্বর্গারোহণ (১৯০৬), মোসলেম পতাকা (১৯০৮-১৯২৪), জীবন্ত পুতুল (১৯০৮), ইংরেজি শিক্ষা সোপান (১৯১১), বঙ্কিম সমালোচনা (১৯২২), মিশর বিজয় (১৯২৩), জ্ঞানভান্ডার (১৯২৪), বাংলা মৌলুদ শরীফ (১৯২৪), স্পেন বিজয় (১৯২৫), হাবশী বাদশাহ (১৯২৫), বিবাহ বিভ্রাট (১৯২৭), নূরজাহান (১৯৩৩) ইত্যাদি। 'হোসেনী ছন্দ' নামে এক প্রকার অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন এবং 'দেবর্ষী দরবার' নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। স্বসম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য তিনি সমস্ত সম্পত্তি দান করে যান।

  • *২. এ.বি.এম. আবুল হোসেন (১৯৩৪-২০২০):** এ.বি.এম. আবুল বাশার মোশারফ হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস এবং ইসলামি শিল্পকলা বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯৩৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামি শিল্পকলা ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে তাঁর অবদান অসামান্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (SOAS) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন এবং ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেন। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইতিহাস, শিল্পকলা ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। বহু সম্মাননা ও পুরষ্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৭ সালে নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য গঠিত বোর্ডের সদস্য মনোনয়ন করেন। ২০২০ সালের ১১ই জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

উভয় আবুল হোসেনই তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের জীবনী ও কর্মকান্ড বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির জন্য অমূল্য সম্পদ।

মূল তথ্যাবলী:

  • সৈয়দ আবুল হোসেন: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও সাহিত্যিক
  • এ.বি.এম. আবুল হোসেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ও ইসলামি শিল্পকলা বিশেষজ্ঞ
  • সৈয়দ আবুল হোসেন: 'হোসেনী ছন্দ' প্রবর্তন
  • এ.বি.এম. আবুল হোসেন: ইসলামি শিল্পকলা ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে অসামান্য অবদান
  • দুজন আবুল হোসেনই তাদের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন