আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ: বঙ্গোপসাগরের মুক্তা
ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উত্তরাংশে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ। মিয়ানমারের উপকূল থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জ প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। দুই শতাধিক দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জে রয়েছে অপূর্ব সৈকত, ঘন জঙ্গল, বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী, এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি।
ইতিহাসের সাক্ষী:
আন্দামানের নামকরণের ইতিহাস কিছুটা অস্পষ্ট। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে চীনা ভ্রমণকারী ঝাও রুকুও'র লেখা ‘ঝু ফান ঝি’ গ্রন্থে ‘ইয়েন-টু মান’ নামে আন্দামানের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ১৫ শতকে ঝেং হে'র ভ্রমণের সময় ‘আন-দে-ম্যান পর্বত’ নামে এটি চিহ্নিত হয়। প্রথম রাজেন্দ্র চোল (১০১৪-১০৪২ খ্রিস্টাব্দ) এই দ্বীপপুঞ্জ দখল করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৭৮৯ সালে ব্রিটিশরা চাথাম দ্বীপে একটি নৌঘাঁটি ও কারাগার স্থাপন করে, যা পরবর্তীতে পোর্ট ব্লেয়ার নামে পরিচিত হয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পরে ব্রিটিশরা আন্দামানকে একটি বৃহৎ কারাগার হিসেবে ব্যবহার করে। বিখ্যাত সেলুলার জেল, যা ‘কালাপানি’ নামেও পরিচিত, এর সাক্ষী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা আন্দামান দখল করেছিল এবং সুভাষচন্দ্র বসু এখানে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
আদিবাসী সম্প্রদায়:
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীরা হলেন আন্দামানী জনগোষ্ঠী, যাদের মধ্যে জারোয়া, সেন্টিনেলীসহ বেশ কিছু উপজাতি রয়েছে। সেন্টিনেলীদের সাথে বাহিরের জগতের যোগাযোগ খুবই সীমিত এবং তারা বহিরাগতদের প্রতি সাধারণত শত্রুতাপূর্ণ। ভারত সরকার তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রয়েছে অপূর্ব সৈকত, ঘন জঙ্গল, সমুদ্র, পাহাড়, এবং উর্বর সমতল ভূমি। উত্তর আন্দামানে অবস্থিত স্যাডল পিক (৭৩২ মিটার) দ্বীপপুঞ্জের সর্বোচ্চ শিখর। ব্যারেন দ্বীপে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরিও রয়েছে।
অর্থনীতি:
আন্দামানের অর্থনীতি মূলত কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ, পর্যটন ও বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল। পর্যটন ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিখ্যাততা:
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এর অপূর্ব প্রকৃতি, সমৃদ্ধ ইতিহাস, আদিবাসী সংস্কৃতি এবং সক্রিয় আগ্নেয়গিরির জন্য বিখ্যাত। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট এবং প্রতিবছর অনেক পর্যটক এখানে ঘুরে আসে।