আনোয়ার ইব্রাহিম: মালয়েশিয়ার রাজনীতির চিরন্তন নেতা
আনোয়ার ইব্রাহিম (জন্ম: ১০ আগস্ট, ১৯৪৭) মালয়েশিয়ার একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক বিরোধী দলের নেতা এবং বর্তমানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ২৪ নভেম্বর ২০২২ সালে তিনি মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার রাজনৈতিক জীবন উত্থান-পতনের এক অবিশ্বাস্য গল্প, যেখানে বন্ধুত্ব, বিরোধ, কারাভোগ এবং অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন স্পষ্ট।
তিনি মালয়েশিয়ার পিপলস জাস্টিস পার্টি (PKR) এর প্রতিষ্ঠাতা। ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (UMNO) এর সদস্য থাকাকালীন ১৯৯৩-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯৯১-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সাথে মতবিরোধের জেরে ১৯৯৮ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়।
পেনাং রাজ্যের চিরোক তক্কুন গ্রামে এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া আনোয়ারের পিতা ইব্রাহিম আব্দুল রহমান একজন হাসপাতাল কর্মচারী এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় সচিব ছিলেন। মা চে ইয়েন হুসেন একজন গৃহিণী। তিনি মালয় কলেজ, কুয়ালা কানজার থেকে মাধ্যমিক এবং ইউনিভার্সিটি অব মালয় থেকে মালয় স্টাডিজে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনে আনোয়ার ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মালয়েশিয়ান মুসলিম স্টুডেন্টস এবং ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার মালয় ল্যাংগুয়েজ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। তিনি মুসলিম ইয়ুথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং মালয়েশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিলের দ্বিতীয় সভাপতিও ছিলেন।
UMNO তে যোগদানের পর আনোয়ারের রাজনৈতিক জীবনে দ্রুত উন্নতি হয়। তিনি সাংস্কৃতিক মন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন তিনি 'ন্যাশনাল স্কুল কারিকুলাম' প্রনয়ন করেন এবং মালয়েশিয়ার জাতীয় ভাষার নাম 'বাহাসা মালয়েশিয়া' থেকে 'বাহাসা মেলায়ু' এ পরিবর্তন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
মাহাথির কর্তৃক বরখাস্ত হওয়ার পর আনোয়ার 'সংস্কার আন্দোলন' শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক মালয়েশিয়া গঠন। তিনি ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি (PKR) প্রতিষ্ঠা করেন এবং 'বারিসন অল্টারনেটিভ' নামে বিরোধী জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোট বিজয়ী হলে আনোয়ারকে রাজকীয় ক্ষমা দেওয়া হয় এবং তিনি মুক্তি লাভ করেন। এই সময়ে মাহাথিরের সাথে এক চুক্তির মাধ্যমে আনোয়ারের উত্তরাধিকার নিশ্চিত হয় যা পরে ২০২২ সালে পূর্ণতা পায়। তাদের উত্থান-পতনের সম্পর্ক মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে এক অভিনব অধ্যায় যোগ করেছে।