আটলান্টিক মহাসাগর, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর, বিশ্বের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রায় ১০ কোটি ৬৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই মহাসাগরটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশকে সংযুক্ত করে। এর গড় গভীরতা প্রায় ৩৬৪৬ মিটার, তবে পুয়ের্তো রিকো খাতের মিলওয়াকি গহ্বরে এর গভীরতা ৮৩৭৬ মিটারে পৌঁছে।
আটলান্টিক মহাসাগরের নামকরণের পেছনে রয়েছে গ্রিক পুরাণের টাইটান অ্যাটলাসের নাম। প্রাচীন গ্রিক লেখক স্ট্রেসিকোরাস ও হেরোডোটাসের লেখায় এর প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়। মধ্যযুগীয় মানচিত্রে অ্যাটলাসের চিত্র দেখা যেত, যা আধুনিক অ্যাটলাস মানচিত্রের নামের উৎস।
আবিষ্কারের যুগে ইংরেজ মানচিত্র প্রস্তুতকারকদের কাছে এটি 'বিশাল পশ্চিমি মহাসাগর' নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ ও আমেরিকানরা, মিশ্রিত আবেগে, 'পুকুর' শব্দটি ব্যবহার করত।
আটলান্টিক মহাসাগরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্ব বাণিজ্যের একটি বিরাট অংশ এই সমুদ্রপথ দিয়ে পরিবহন হয়। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার মধ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আটলান্টিক তীরে অসংখ্য বন্দর ও পোতাশ্রয় আছে। মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্যের জন্যও আটলান্টিক বিখ্যাত।
তবে, আটলান্টিক মহাসাগরের সৌন্দর্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি কিছু পরিবেশগত সমস্যাও রয়েছে। জলদস্যুতা, জলদূষণ, এবং জলবায়ু পরিবর্তন এর বাস্তুতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সমুদ্র স্রোত, লবণাক্ততা, এবং তাপমাত্রার বৈশিষ্ট্যও এর গুরুত্বপূর্ণ দিক।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যেমন চ্যালেঞ্জার অভিযান, জার্মান উল্কা অভিযান, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যামন্ট-দোহার্টি আর্থ অবজারভেটরি এবং মার্কিন নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক অফিস, এর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আটলান্টিক মহাসাগরের গভীর সমুদ্র খাত, সমুদ্রতলের ভূসংস্থান, সমুদ্র স্রোত, এবং জলবায়ুর উপর গবেষণা অব্যাহত আছে।