আঞ্চলিক রাজনীতি

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১:৫৯ এএম

ভারতের আঞ্চলিক রাজনীতি: একটি বিশ্লেষণ

ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যে আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কয়েক দশক ধরে, এই দলগুলি কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং তাদের আঞ্চলিক আশা-আকাঙ্খা জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নেও প্রভাব বিস্তার করছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের ভূমিকা আরও নির্ণায়ক হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

দক্ষিণ ভারতের উত্থান: ১৯৪৯ সালে চেন্নাইতে (তৎকালীন মাদ্রাজ) আন্নাদুরাই দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগম (ডিএমকে) দল প্রতিষ্ঠা করেন, যা ভারতের প্রথম আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। এর আগে ব্রিটিশ রাজ এবং তামিল ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে জাস্টিস পার্টি এবং দ্রাবিড় কাজাগমের মতো সংগঠন গড়ে উঠেছিল। ডিএমকে-র উত্থানের পেছনে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন, দিল্লির হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ এবং তামিলদের স্বার্থরক্ষায় দিল্লির ব্যর্থতা প্রধান কারণ ছিল। এই প্রবণতা পরবর্তীতে দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।

উত্তর ভারতের পরিপ্রেক্ষিত: উত্তর ভারতে আঞ্চলিক রাজনীতির উত্থান অনেক পরে, আশির দশকে ঘটে। বিহার ও উত্তরপ্রদেশে জনতা পার্টি ভেঙে যাওয়ার পরে, রাজনীতিবিদরা স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি করতে শুরু করেন। লালু প্রসাদ যাদব (বিহার), মায়াবতী ও মুলায়ম সিং যাদব (উত্তরপ্রদেশ) এমন কিছু নেতা যারা আঞ্চলিক দল গড়ে তুলেছেন। এই দলগুলি প্রায়শই দলনেতা বা নেত্রীর ছবি এবং নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার করে প্রচার চালায়।

জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব: নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে আঞ্চলিক দলগুলি এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে সর্বভারতীয় দলগুলি তাদের সহায়তা ছাড়া সরকার গঠন করতে পারে না। ডিএমকে, এআইএডিএমকে, শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল ইত্যাদি দলগুলি জাতীয় স্তরের বিভিন্ন জোটে যুক্ত হয়ে থাকে। তবে, আঞ্চলিক দলগুলির জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে চাপ তৈরি করার অভিযোগও রয়েছে।

২০২৪ সালের নির্বাচন: ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই সর্বভারতীয় দলগুলি বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস একটি অকংগ্রেসী ও অ-বিজেপি ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। এবারের নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলি নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উপসংহার: ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা অপরিহার্য। তাদের উত্থান স্থানীয় সমস্যা ও আকাঙ্খাকে জাতীয় রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে। আগামী দিনগুলিতে তাদের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৪৯ সালে চেন্নাইতে দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগম (ডিএমকে) দলের প্রতিষ্ঠা।
  • আঞ্চলিক দলগুলি কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • উত্তর ভারতে আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান আশির দশকে।
  • নব্বইয়ের দশক থেকে আঞ্চলিক দলগুলির ক্রমবর্ধমান শক্তি।
  • ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।