আগনেস কেলেটি: হলোকাস্ট থেকে অলিম্পিকের সোনালী অধ্যায়
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ হলোকাস্টের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা থেকে বেঁচে উঠে বিশ্ব অলিম্পিকের ইতিহাসে এক অমোঘ স্থান করে নিয়েছিলেন আগনেস কেলেটি। হাঙ্গেরির এই কিংবদন্তী জিমন্যাস্ট ১০৩ বছর বয়সে গত বছর বুদাপেস্টের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ছেলে রাফায়েল বিরো এবং প্রেস কর্মকর্তা তামাস রোথ এই মর্মন্তুদ খবরটি নিশ্চিত করেন।
১৯২১ সালের ৯ জানুয়ারি এক ইহুদি পরিবারে আগনেস ক্লাইন নামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তীতে নিজের নামের পদবী পরিবর্তন করে কেলেটি রাখেন। মাত্র ৪ বছর বয়সে জিমন্যাস্টিকসের সাথে পরিচিত হন এবং ১৬ বছর বয়সে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৩৯ সালে তিনি জাতীয় দলে স্থান পান। কিন্তু ইহুদি হওয়ার কারণে ১৯৪০ সাল থেকে তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
নাৎসিদের দখলদারিত্বের সময় প্রাণ বাঁচাতে তিনি নিজেকে খ্রিস্টান হিসেবে পরিচয় দিয়ে জাল কাগজপত্রের সাহায্যে মৃত্যু শিবির থেকে রক্ষা পান। এই সময় তার বাবা ফেরেঙ্ক ক্লাইনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নাৎসিরা হত্যা করে। তবে সুইডিশ কূটনীতিক রাউল ভালেনবার্গের সহায়তায় তার মা ও বোন বেঁচে যান। গ্রামাঞ্চলে লুকিয়ে থাকার সময় তিনি বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন এবং অবসর সময়ে দানিউব নদীর তীরে গোপনে অনুশীলন করতেন।
১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কি এবং ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে তিনি মোট ১০ টি পদক জেতেন, যার মধ্যে ৫টি সোনা। ৩০ বছরের বেশি বয়সে তিনি এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরির সোভিয়েত বিরোধী বিদ্রোহের পর তিনি দেশ ত্যাগ করেন এবং পরের বছর ইসরায়েলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তিনি হাঙ্গেরিয়ান ক্রীড়া শিক্ষক রবার্ট বিরোকে বিয়ে করেন।
খেলোয়াড়ী জীবনের পর শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক এবং ইসরায়েল জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেন। ১৯৮৩ সালে বিশ্ব জিমন্যাস্টিক চ্যাম্পিয়নশিপ উপলক্ষে তিনি কমিউনিস্ট শাসিত হাঙ্গেরিতে ফিরে আসার অনুমতি পান। ২০১৫ সাল থেকে তিনি হাঙ্গেরিতে বসবাস করেন।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি টমাস বাখ এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। আগনেস কেলেটির জীবনী একটি অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী, যা হলোকাস্টের ভয়াবহতা ও অলিম্পিকের সোনালী সাফল্যের মাঝে এক অসাধারণ যাত্রার কথা বলে।