অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী (বৈজ্ঞানিক নাম: Aloe vera), একটি রসালো ও ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এটি এলো পরিবারের অন্তর্গত এবং লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কার। অ্যালোভেরার ৬০০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে, মিশরে এর প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে এলোভেরার ব্যবহার খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই চলে আসছে।
ঘৃতকুমারী দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। এর পাতাগুলি পুরু, দুধারে করাতের মত কাঁটা এবং ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল জেল থাকে। বিভিন্ন ধরনের মাটিতে ঘৃতকুমারী চাষ সম্ভব, তবে দোঁআশ ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। নিয়মিত জল সেচের দরকার হলেও গাছের গোড়ায় যাতে জল না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণত শেকড় থেকে গজানো ডাল বা ‘শাখা’ এর সাহায্যে এই গাছের বংশবৃদ্ধি হয়।
এই ঘৃতকুমারীতে রয়েছে ২০ রকমের খনিজ পদার্থ, মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ২২টি অ্যামিনো অ্যাসিড, এবং ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E। ঘৃতকুমারীর পাতা ও জেল ব্যবহার করা হয়। এর জেল যকৃতের জন্য উপকারী, ফোঁড়ায় লাগালে যন্ত্রণা কমে, পোড়া স্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। হাঁপানি ও এলার্জি প্রতিরোধে ঘৃতকুমারী কার্যকরী। এটি ত্বকের জন্য খুব উপকারী, ত্বকের দাগ, ব্রণ, এবং শুষ্কতা দূর করতে অনেক কার্যকরী।
অ্যালোভেরার উপকারিতা নানাবিধ। এটি হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে, দাঁত ও মাড়ির যত্নে, ওজন হ্রাসে, হজমশক্তি বৃদ্ধিতে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, মুখের দূরগন্ধ দূর করতে, চুলের যত্নে, মুখের ঘা সারাতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং ক্লান্তি দূর করতেও অ্যালোভেরা ব্যবহৃত হয়। তবে গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারী, ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।