অশ্লীল ভিডিও: এক নজরে বিশ্লেষণ
সাম্প্রতিককালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে নারীদের ব্যক্তিগত ও অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও অনলাইনে প্রকাশের ফলে অনেকেই হুমকি ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন। এই অশ্লীল ভিডিওগুলির উৎস, প্রকৃতি ও প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
রেডিটে অশ্লীল ভিডিওর বাজার: বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রেডিট প্ল্যাটফর্মে অজ্ঞাত পরিচয় নারীদের অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও বিক্রয়ের একটি বাজারের কথা। এসব ছবি-ভিডিও প্রকাশের পেছনে রয়েছে সাবেক প্রেমিক, বন্ধু বা পরিচিতদের হাত। অনেক ক্ষেত্রে, ছবিগুলো নগ্ন বা অন্তরঙ্গ না হলেও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যের সাথে পোস্ট করা হচ্ছে, এবং নারীদের ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্যও ফাঁস করা হচ্ছে ("ডোক্সিং")। এসবের ফলে নারীরা হুমকি, ব্ল্যাকমেইল এবং সাইবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
রেডিটের পদক্ষেপ: রেডিট তাদের প্ল্যাটফর্মে বিতর্কিত যৌন কন্টেন্টের ইতিহাস স্বীকার করেছে এবং ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়াস চালিয়ে আসছে। তবে, অনুমতি ছাড়া প্রকাশিত অন্তরঙ্গ ছবি খুঁজে বের করার জন্য তাদের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ও একটি দল কাজ করে। তারপরও, অনেক নারীর অভিযোগ রয়েছে যে রেডিট তাদের সাহায্যে আন্তরিক নয় এবং কন্টেন্ট সরিয়ে নিতে দীর্ঘ সময় লাগছে।
আইনি দিক: ব্রিটেনে রিভেঞ্জ পর্নের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও, এটা প্রমাণ করতে হয় যে ছবি শেয়ার করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে আঘাত দেবার জন্য। এই আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।
'জিপ্পোম্যাড' এবং হিমেশ শিংগাড়িয়া: বিবিসি একজন রেডিট ব্যবহারকারী 'জিপ্পোম্যাড' কে খুঁজে পায়, যিনি এক গ্রুপ তৈরি করে দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের টার্গেট করেছিলেন। তার আসল নাম হিমেশ শিংগাড়িয়া, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন এবং একটি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজারের কাজ করেন। তিনি সাবরেডিটে তার সাইট মুছে দিয়েছেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
কালেক্টার কালচার: অনলাইনে অশ্লীল ছবি-ভিডিও নিয়ে ব্যবসা এতটাই ব্যাপক হয়েছে যে, বিশেষজ্ঞরা একে 'কালেক্টার কালচার' নামে অভিহিত করেছেন। হাজার হাজার পুরুষ এই গোষ্ঠীতে জড়িত এবং অনুমতি ছাড়া ছবি-ভিডিও সংগ্রহ করে নিজেদের কদর বাড়াতে চায়।
বাংলাদেশের ঘটনা: কমলাপুর রেলস্টেশনের মনিটরে অশ্লীল ভিডিও প্রদর্শনের ঘটনায় আদালত জড়িতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে। ঘটনাটি ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে অপরাধ।
সাইবার অপরাধীদের কৌশল: ভারতে, "ভরতপুর গ্যাঙ" নামে একটি গোষ্ঠী অচেনা নম্বর থেকে ভিডিও কল করে পুরুষদের ফাঁদে ফেলে এবং ব্ল্যাকমেইল করে। এরা টর ব্রাউজার ব্যবহার করে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখে। এই অপরাধের শিকারদের সংখ্যা অজানা, কিন্তু এটি ক্রমবর্ধমান।
প্রতিরোধ: অচেনা নম্বর থেকে আসা ভিডিও কল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মোবাইলের সেলফি ক্যামেরার ওপর স্টিকার লাগিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। পুলিশকে অবহিত করাও অত্যন্ত জরুরি।